অস্তিত্ব সংকটে স্ক্যানার

শুধুমাত্র কথা বলার যন্ত্র হিসেবে আবিষ্কৃত হলেও মোবাইল ফোনে আজ কি না হয়? ছবি তোলা, গান শোনা, মুভি দেখা এমনকি ইমেইল করার কাজটিও আজ পকেটে থাকা এই ছোট ডিভাইসের মাধ্যমে করা সম্ভব। সেই সাথে এই একটি ডিভাইসই দখল করে নিয়েছে অনেকগুলি ডিভাইসের জায়গা। দশ বছর আগের কথাই চিন্তা করুন। বিয়ে বা কোন অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে একটি ক্যামেরা সংগ্রহ করতে কতজনের কাছেই না ধরনা দিয়েছেন। কিন্তু আজ শুধু বিয়ের অনুষ্ঠানই নয় বরং অতি তুচ্ছ কোন কারণে ক্যামেরার দরকার হলে নিজের পকেটেই হাত দিচ্ছেন। আলাদা ক্যামেরা কেনার চিন্তা এখন খুব কম সংখ্যক মানুষই করে থাকেন। কারন পকেটে থাকা মোবাইল ফোন দিয়েই প্রায় কাছাকাছি মানের ছবি তোলা যাচ্ছে। যদিও প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারদের কাছে মোবাইল ফোন এখনো খেলনার মতই রয়ে গেছে। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই দৃশ্য পাল্টে যেতে পারে। কারন ৪১ মেগা পিক্সেল ক্যামেরাযুক্ত লুমিয়া ১০২০ তৈরির পর নির্মাতারা এবার ডিএসএলআর ক্যামেরার বাজার দখলে তৎপর। মোবাইল ফোনের এই অব্যাহত আগ্রাসনের ফলে এরই মধ্যে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে আরেকটি বহুল ব্যবহৃত ডিভাইস স্ক্যানার। অনেক আগে থেকেই ছোট খাটো ডকুমেন্ট স্ক্যান করতে হলে মোবাইলের ক্যামেরাতেই সেরে ফেলতাম। সম্প্রতি ওডেস্কে অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করতে গিয়ে প্রথম কোন সিরিয়াস কাজে এই শিশুসুলভ কাজটি করলাম।ওডেস্কই এরকম টিপস দিয়েছে। যাদের স্ক্যানার নেই শুধু তাদের জন্য।

ওডেস্ক অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই

ফোন কোম্পানিগুলোও ক্যামেরার এই ব্যতিক্রমী ব্যবহারকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। লেটেস্ট মডেলের প্রায় সব ফোনেই লেখা স্ক্যান করতে ক্যামেরায় আলাদা প্রিসেট জুড়ে দেয়া হচ্ছে যার মাধ্যমে আরও ভালোভাবে লেখা স্ক্যান করা যায়। শুধু তাই নয় বেশ কিছু থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশনে অপটিক্যাল কারেক্টার রিকগনিশন বা ওসিআর সুবিধাও পাওয়া যায়। সবাই যখন মোবাইল ফোনের স্ক্যানিং সুবিধাকে এতোটা গুরুত্ব দিচ্ছে তখন আমরাও প্রয়াস পাই এর নানাদিক নিয়ে কিছু প্যাঁচাল চালানোর। পোস্টের শেষভাগে থাকছে কিছু টিপস যার মাধ্যমে আপনার স্ক্যানিং এর হাতকে আরেকটু দক্ষ করে তুলতে পারেন। একটু ভুল হয়ে গেল মনে হয়! মোবাইলতো এখন আর মোবাইল নেই। এটি হয়ে গেছে স্মার্টফোন। তাই এখন থেকে স্মার্টফোন বলাই ভালো।

স্ক্যানার বনাম স্মার্টফোনঃ ভাবুন তো! আপনার বন্ধুর করা অ্যাসাইনমেন্টের দুটি পৃষ্ঠা আপনার খুব দরকার। প্রয়োজন থাকায় আপনাকে ধারও দেয়া যাচ্ছে না। ফটোকপির দোকানও বেশ দূরে। পকেটে থাকা কোন যন্ত্র যদি এসময় উদ্ধার করতে পারে তবে স্মার্টফোন। হ্যাঁ পোর্টাবাইলিটির কথাই বলছি। এক্ষেত্রে স্মার্টফোনকে ১০০ দিয়ে স্ক্যানারকে জিরোই দিতে হয়। কারণ পিসি সহ স্ক্যানার সাথে নিয়ে কি আর ঘোরা সম্ভব? আবার একই ডিভাইসে স্ক্যান করা ও পড়ার কাজ করা যায় বলে স্মার্টফোনকে আরেকটু এগিয়ে রাখতে পারেন। সেই সাথে অন্য বন্ধুর সাথে শেয়ার করার সুবিধাতো থাকছেই। ক্যামেরার মেগা পিক্সেল যদি অনেক বেশি হয় তাহলেতো কথাই নেই সাধারণ স্ক্যানারের চেয়েও বড় করে স্ক্যান করতে পারবেন। তবে স্ক্যান করা ডকুমেন্টটি যদি সিরিয়াস কাজে ব্যবহৃত হয় তবে মাথায় রাখুন সবাই ওডেস্কের মত উদার নয়। কারণ স্মার্টফোনে স্ক্যান করতে গেলে কিছু সমস্যাও পাবেন। সাধারণ স্ক্যানারের চেয়ে ফোনে নানা সেটিং পরিবর্তন করে লেখা স্ক্যান করা বেশ ঝামেলা এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই দু-তিন পৃষ্ঠার বেশি স্ক্যান করতে স্ক্যানারই ব্যবহার করা উচিৎ। এছাড়া ফোনটি যতই সোজা করে ধরুন না কেন কাগজ কিন্তু কখনোই পুরোপুরি সোজা হবে না। তাই কাগজের বাইরে কিছু বাড়তি অংশসহ স্ক্যান হবে।

আলোর তারতম্য এবং বাকা স্ক্যান
আলোর তারতম্য এবং বাকা স্ক্যান

সাধারণ স্ক্যানার বদ্ধ পরিবেশে নিয়ন্ত্রিত আলোয় স্ক্যান করে। কিন্তু ক্যামেরায় তা অসম্ভব। তাই কাগজের বিভিন্ন স্থানে আলোর তারতম্য খেয়াল করার মত পর্যায়ে থাকে। আবার স্ক্যানার শুধুমাত্র লেখাই স্ক্যান করে কিন্তু ক্যামেরা কাগজসহ ছবি তোলে। এতে স্ক্রিনে পড়তে ভালো লাগলেও প্রিন্ট করার সময় কালো কালো ছোপ তৈরি করে। ফলে লেখা কিছুটা অস্পষ্ট আসতে পারে। তাই ভবিষ্যতে যাই হোক স্ক্যানারকে এখনোই স্মার্টফোন দিয়ে রিপ্লেস করা যাচ্ছে না

ikt
প্রিন্ট করা ডকুমেন্টে কালো ছোপ

স্ক্যান কোয়ালিটি বাড়াবেন যেভাবেঃ

আপনি স্মার্টফোন দিয়ে যতটা ভালো স্ক্যান করেন তাতে হয়ত আপনার প্রয়োজন মিটে যায়। আরেকটু ভালো স্ক্যান করে যদি স্ক্যানারের আরেকটু কাছাকাছি যাওয়া যায় তাহলে কেমন হয়? এজন্য সাধারণ কিছু নিয়ম অনুসরণ করুন। ক্যামেরা চালু করে মুড বা প্রিসেট অপশনে গিয়ে টেক্সট/টাইপ সিলেক্ট করুন।

Text/Type preset

যদি টাইপ প্রিসেট না থাকে তবে Auto সিলেক্ট করুন। এবারে টেবিলের উপর কাগজটি সমতল ভাবে স্থাপন করুন। ক্যামেরাটি এমনভাবে ধরুন যাতে কাগজের প্রান্তগুলি স্ক্রিনের প্রান্ত স্পর্শ করে। আগেই বলেছি হাজার চেষ্টা করেও পুরোপুরি সোজাভাবে স্ক্যান করা যাবে না। কিন্তু যতটুক করা যায় আর কি। এবার শাটার রিলিজ বাটন হালকা ভাবে চেপে কিংবা স্ক্রিনের মাঝখানে টাচ করে ফোকাস করুন। উল্লেখ্য এভাবে ফোকাস করার সুবিধা সব ফোনে থাকে না। যাই হোক ফোকাস করার পর দেখুন কেমন দেখায়। Exposure পরিবর্তন করে আলো কমাতে বা বাড়াতে পারেন। তবে ডকুমেন্ট যদি প্রিন্ট করতে চান তাহলে এক্সপোজার বেশি দিয়ে তোলাই ভালো। এতে প্রিন্ট করার সময় কাগজের টেক্সচার কম আসবে। তবে এক্সপোজার ফুল দিয়ে ওভার এক্সপোজ করে ফেলবেন না। আলো খুব কম হলে ফ্লাশ ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু প্রয়োজন না হলে ফ্লাশ ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ ফ্লাশ ব্যবহার করলে প্রান্তের তুলনায় মাঝখানে বেশি উজ্জ্বল আসে। এইসব অ্যাডজাস্টমেন্ট করার পর আবার ফোকাস করুন দেখুন। সব ঠিক থাকলে শাটার রিলিজ বাটন চেপে ছবি তুলুন। আর হ্যাঁ স্ক্যান করার কাজটি আরেকটু সহজ ও গতিময় করতে থার্ড পার্টি অ্যপ্লিকেশন CamScanner ব্যবহার করতে পারেন। এটি স্ক্যান করা ছবিকে সরাসরি পিডিএফ ফরম্যাটে কনভার্ট করে

gwf

আর এজ ডিটেকশন ফিচার থাকায় এটি নিজে থেকেই কাগজের বাইরে থাকা বাড়তি অংশ ক্রপ করে বাদ দিয়ে দেয় এবং অবশিষ্ট থাকা কাগজকে ফটোশপের মত ট্রান্সফর্ম করে সোজা করে দেয়। তাই স্ক্যান করার সময় কাগজ সামান্য বাঁকা উঠলেও সমস্যা নেই। এছাড়া আরও অন্যান্য ফিচার তো রয়েছেই তাই আপনার যদি আইওস কিংবা অ্যান্ড্রয়েড অপারেটেড ফোন থাকে তবে অবশ্যই এই ফ্রি অ্যাপ্লিকেশনটি যথাক্রমে AppStore অথবা Google Play থেকে ডাউনোলোড করে নিবেন। আজ এ পর্যন্তই। আল্লাহ হাফেজ।